,

৭ বছরেও বসেনি মধুখালী-মাগুরা রেললাইন

নিজস্ব প্রতিবেদক: ফরিদপুরের মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা পর্যন্ত রেলপথের নির্মাণকাজ চলছে। তবে সাত বছর ধরে চলা এই প্রকল্পে এখনো রেললাইন বসানোর কাজ শুরু করা যায়নি। এমন অবস্থায় দ্বিতীয় দফায় প্রকল্পের মেয়াদ আরো ১৮ মাস বাড়িয়েছে সরকার। বর্তমান মেয়াদে ২০২৫ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।

পরিকল্পনা কমিশন থেকে গত বুধবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়িয়ে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে চিঠি দেওয়া হয়েছে। তবে মন্ত্রণালয় থেকে এখনো মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। আগামী রবিবার প্রজেক্ট স্টিয়ারিং কমিটির (পিএসসি) সভা হওয়ার পর মেয়াদ বাড়ানোর বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাবে রেলপথ মন্ত্রণালয়।

মধুখালী থেকে কামারখালী হয়ে মাগুরা শহর পর্যন্ত ব্রড গেজ রেলপথ নির্মাণের মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো ঢাকার সঙ্গে মাগুরার ট্রেন যোগাযোগ স্থাপন হবে।

ফরিদপুরের ভাঙ্গায় যে জংশন গড়ে উঠছে তাকে কেন্দ্র করে মাগুরার ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাতে পারবে।

২০১৮ সালের ২৯ মে এই প্রকল্পের কাজ শুরু হয়। এ জন্য এক হাজার ২০২ কোটি  ৪৯ লাখ ৩৫ হাজার টাকা খরচ নির্ধারণ করা হয়। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল।

কিন্তু কাজ শেষ না হওয়ায় দুই বছর দুই মাস মেয়াদ বাড়িয়ে ২০২৪ সালের ৩০ জুন লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়। তবু শেষ হয়নি কাজ। এখন আবার দ্বিতীয় দফায় দেড় বছর প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে।

মূলত জমি অধিগ্রহণ, সেতু নির্মাণে জটিলতা ও রেলপথ তৈরিতে ধীরগতির কারণে চার বছরের প্রকল্পের কাজ প্রায় ৯ বছরে গিয়ে ঠেকেছে। ২০২২ সালের ৩০ এপ্রিল কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও শুরুই হয় ওই বছরের ২ আগস্ট।

সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রকল্পের মাগুরা অংশে মধুমতী নদীর ওপর নির্মীয়মাণ রেল সেতুর খুঁটি ছাড়া আর তেমন কোনো নির্মাণকাজ এখনো দৃশ্যমান হয়নি। সেতুর ৫৬টি খুঁটির মধ্যে বেশ কয়েকটি দেখা যাচ্ছে। অধিগ্রহণ করা জমির মালিকদের মধ্যে কিছু চেক বিতরণ করা হচ্ছে। যে এলাকা দিয়ে রেলপথ যাবে সেখানে সীমানা চিহ্নিত করা হয়েছে। মাগুরার ঠাকুরবাড়ী এলাকায় পরিকল্পিত রেলস্টেশনের স্থানে গিয়ে কিছু নির্মাণসামগ্রী দেখা যায়।

জানতে চাইলে বাংলাদেশ রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অবকাঠামো) মো. আরিফুজ্জামান বলেন, ‘সরেজমিনে দেখার জন্য আগামী শনিবার মন্ত্রী ও সচিবের প্রকল্প এলাকায় যাওয়ার কথা রয়েছে। তাঁরা দেখে আসার পর একটা আপডেট পাওয়া যাবে। তাই এখন মন্তব্য করা উচিত হবে না।’

প্রকল্পের নথির তথ্য বলছে, মাগুরা জেলাকে বিদ্যমান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আওতায় যুক্ত করতে মোট ২৩.১০ কিলোমিটার নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হবে। মূল রেললাইন ১৯ কিলোমিটার ও লুপ লাইন ৪.১০ কিলোমিটার।

সর্বশেষ অগ্রগতি প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, মধুখালীতে মূল রেললাইন নির্মাণ এবং কামারখালী ও মাগুরা স্টেশনে রেললাইন নির্মাণের আগের প্রস্তুতি চলছে। আর রেল, বাঁধের স্লিপার ও পাথর সরবরাহের কাজ চলমান। কামারখালী ও মাগুরায় দুটি নতুন স্টেশন নির্মাণের কাজ চলছে। রেলপথে একটি আন্ডারপাস রয়েছে, যার কাজ এখনো শুরু হয়নি।

প্রকল্পের আওতায় চন্দনা ও গড়াই সেতু নির্মীয়মাণ। এই দুই সেতুর সব খুঁটি ও পিয়ার বসানো শেষ হয়েছে। পাশাপাশি চলছে নদীশাসনের কাজ। ২৭টি বড় সেতু ও কালভার্ট নির্মাণের কাজ চলমান। রেলপথে সংকেতের কাজ এখনো শুরু হয়নি। তবে পুরো পথে ২০টি লেভেলক্রসিং গেট নির্মাণ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে গত এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক কাজের অগ্রগতি হয়েছে ৫০.৩৯ শতাংশ।

সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেছেন, প্রকল্পের কিছু কাজ এখনো শুরু না হওয়ার কারণ ভূমি বুঝে না পাওয়া। জমি অধিগ্রহণের জটিলতা কাটাতে জেলা প্রশাসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে।

প্রকল্পের আরেকটি সূত্রও বলেছে, ভূমি অধিগ্রহণে বিলম্বের কারণে সময়মতো কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি। করোনাকালে এবং করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্বব্যাপী নির্মাণসামগ্রীর চাহিদা ও মূল্যবৃদ্ধি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের প্রভাবের কারণেও প্রকল্পের বাস্তবায়ন মন্থর হয়েছে। উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাবে (ডিপিপি) ২৭টি কালভার্টের সংস্থান থাকলেও বাস্তবে ৩১টি বক্স কালভার্ট প্রয়োজন হবে। এ ছাড়া কামারখালী ও মাগুরা স্টেশন ইয়ার্ডে কালভার্টের দৈর্ঘ্য বাড়ানো এবং চন্দনা সেতুর একটি স্প্যান বৃদ্ধির প্রয়োজন হবে। সূত্র আরো বলেছে, সেতুর গার্ডার অংশের স্টিলের সরঞ্জাম সহজলভ্য না হওয়ায় বুয়েটের মতামত অনুযায়ী স্টিলের সরঞ্জাম পরিবর্তনের জন্য ডিপিপি সংশোধন করা প্রয়োজন।

রেলের পশ্চিমাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী ও প্রকল্প পরিচালক মো. আসাদুল হক বলেন, ‘বড় জটিল কাজগুলো শেষ হয়ে গেছে। আশা করি, মাস দুয়েকের মধ্যে রেললাইন বসানোর কাজ শুরু করা যাবে। মাগুরা থেকে এখনো আমরা সব জমি বুঝে পাইনি। যদি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে জমি পাওয়া যায় তাহলে বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারব।’

কাজের সুবিধার জন্য পুরো প্রকল্পের কাজকে দুটি অংশ বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম প্যাকেজে রেললাইন এবং দ্বিতীয় প্যাকেজে সেতুসহ অন্যান্য অবকাঠামো নির্মাণের কাজ রয়েছে। বর্ষা মৌসুমে প্রকল্পের কাজে যেন বিঘ্ন না ঘটে সে জন্য ঠিকাদারের সঙ্গে কর্মপরিকল্পনা তৈরি করা হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর